অন্তরা দাস
একেই বলে উলটপুরাণ। একদিকে তিন তিনটে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে ছটফট করে মরতে হল ১৮ র তরতাজা প্রাণকে। আর অন্যদিকে বিগ বি-র করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় চলছে বিশাল যজ্ঞ!
কি আশ্চর্য তাই না? না ভুল ভাববেন না। বিগ বি এর জন্য তাঁর ভক্তকূলের প্রার্থনাটা ভুল নয়।
শুধু বিগ বি কেন? কাঁড়ি টাকা খরচ করে যজ্ঞ হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী করোনা থেকে সুস্থতা কামনা করেও।
চলুক। অসুবিধা নেই। যেমন আমাদের দেশে আরও কত কি চলে!
কথা হল যে ছেলেটিকে বিনা চিকিৎসায় ১৮ বছরে একলা বাবা-মাকে ফেলে চলে যেতে হল তার দোষ কি ছিল? কেউ সেই প্রশ্ন তুলবে না?
হ্যাঁ লকডাউনে এখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার সময় নয়, তা বলে এতটা চুপ থাকাও কি ঠিক?
অন্তত যতটা চিতকার আমরা বচ্চন পরিবারের জন্য করছি, ততটা চিতকার কি করতে পারি না?
করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে এই পরিস্থিতিতে সবাই স্যালুট জানাচ্ছেন ডাক্তারদের। ১ জুলাই তাঁদের জন্য সরকারের তরফে একটি বিশেষ দিন ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
কিন্তু আদেও কি ডাক্তাররা সেই সেই সম্মানের মর্যাদা দিতে পারছেন? প্রশ্ন উঠছে অনেকের মনে। আদতে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র বিশেষ ক্ষমতা থাকলে তবেই সেই পরিবারের মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন।
সাধারণ মানুষেরা, যাদের কোনও বিশেষ ক্ষমতা নেই। কোনও বিশেষ মহলের সঙ্গে যাদের কোনও যোগসূত্র নেই তাদের পরিবারের রোগীদের বাইরে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হয়।
শুক্রবার এই মানসিকতার জন্যই ইছাপুরের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়েছে।
কামারহাটি ইএসআই, বেলঘরিয়া মিডল্যান্ড, কলকাতা মেডিকেল সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে।
কারণ? কারণ তারা ‘সাধারণ মানুষ’। রোগ, কস্ট হাসপাতালে ভর্তি জন্য যথেষ্ট নয়। ছেলেকে ভর্তি করার জন্য রোগীর মাকে আত্মহত্যার হুমকি হয়!
আশ্চর্য, যেখানে করোনা টেস্ট করার অন্তত ২ দিন পর তাঁর রিপোর্ট পাওয়া যায়, সেখানে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে কীভাবে একটি নার্সিংহোম সেই রিপোর্ট দিয়ে দিল?
দ্বাদশ শ্রেণির এই পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও হইহই রব নেই। নেই কোনও প্রতিবাদও।
একইদিনে বলিউড খ্যাত অমিতাভ বচ্চনের সামান্য করোনা রিপোর্টে পজিটিভ এসেছে বলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ঝড় তুলে দিয়েছেন নেটিজেনরা।
বিগ-বির আক্রান্তের খবর পেয়েই ভক্তরা তাঁর আরোগ্য কামনায় যাগযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছেন।
বলিউড খ্যাত অমিতাভ বচ্চন সকলের প্রিয় হলেও তাঁর ক্ষেত্রে যদি যোগ্য হতে পারে, তবে দ্বাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়ার ক্ষেত্রে কেন এমন আচরণ? কেন ডাক্তাররা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করলেন না?
ডাক্তার আরও একবার নিজেরাই নিজেদের কলুষিত করলেন।